প্রিয় ক্যাম্পাস
অনেকের মতো এখন পর্যন্ত আমারও জীবনের ভালো সময়
কেটেছে প্রিয় বাকৃবি ক্যাম্পাসে। মাঝে মাঝে এমনি ঘুরতাম। হয় হেঁটে বা সাইকেলে। পুরা
ক্যাম্পাস রাউন্ড দিতাম। কখনো ফজরের পরে, কখনো আছরের পরে, কখনো রাতে। কখনো একা, কখনো
বন্ধুদের সাথে। ক্যাম্পাসের প্রতিটি মানুষ, রাস্তা, ভবন, গাছপালা, নদী, মাটি, লতাপাতা,
গুল্ম, পুকুর, লেক, বাজার, রেললাইন, ব্রীজ, স্মৃতিস্তম্ভ, মিলনায়তন, বাগান, ইত্যাদি
ইত্যাদি খুব মিস করি। এখনো মন চায় সুযোগ পেলে চলে যাই। তবে ইদানীং একটু অভিমান হয়েছে
আমার। কিছু অপ্রাপ্তি ও ব্যবহার মনে কষ্টের সঞ্চার করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কনভোকেশন
না পাওয়া, আমার প্রিয় রুম (শহীদ শাসমুল হক হলের ১১৮) খুব বিশ্রী করে রাখা। এক মজনু
নাকি উঠেছিল এই রুমে। রুমের দেয়াল, ছাদ, আলমিরা, টেবিল ও চেয়ারে একটি নাম ও উলকি এঁকে
খুবই নোংরা করে রেখেছিল। এখনো কি এমনই আছে? অথচ নিচতলার এই রুমটিতেই কেটেছে আমার বিশ্ববিদ্যালয়
জীবন। তারপরেও ক্যাম্পাস খুব টানে। মন চায় চলে যাই। সুযোগ পেলে বারবার যেতে চাই।
রি-ইউনিয়ন
লেগে থাকলে সফলতা আসে, তার আরেকটা উদাহরণ ক্যাম্পাস
থেকে আসার দেড়যুগ পর রি-ইউনিয়ন ২০২৬। অনেক দিন থেকে ইচ্ছে ছিল। অনেকেই ইচ্ছে প্রকাশ
করে কিন্তু উদ্যোগ নেয়া হয় না। ক্যাম্পাসের লোকজন বলে তোমরা করো, ক্যাম্পাসের বাহিরের
লোকজন বলে তোমরা করো। এভাবেই চলছিল। বন্ধু বনিআমিন হোয়াটসঅ্যাপ-এ গ্রুপ খোলার পর বন্ধু
রাজু, হাফিজ, সাজ্জাদ, আজম, নিশাত, জয়াসহ সবার আলোচনায় উঠে আসে রিইউনিয়ন। এর মধ্যে
আমরা সফলভাবে ইফতার মহফিল-২০২৫ আয়োজন করায় রিইউনিয়নের ভাবনাটা আরো জোরালো হয়। ছোট ছোট
অনেক প্ল্যান করতে থাকি। পরবর্তীতে হাফিজ, সাজ্জাদ ও আজম অক্লান্ত পরিশ্রম করে রি-ইউনিয়নের
বিভিন্ন ডকুমেন্টস তৈরি ও কাজ করতে থাকে। সাথে আঞ্জাম দেই আমরা সবাই। বন্ধু নিশাত,
ইফতি ও মহি-এর হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে আমাদের অনেক বন্ধু রেজিস্ট্রেশন করতে বাধ্য হয়।
ক্যাম্পাসের শিক্ষকসহ সকল বন্ধুদের সহযোগিতায় ২০২৬ সালের ৯ ও ১০ জানুয়ারি প্রায় তিনশত
বন্ধু ও কারোর পরিবারসহ প্রায় আটশত মানুষের সম্মিলন হবে আশা করি। এরকম একটি প্রোগ্রাম
আয়োজনের জন্য অংশগ্রহণকারী এবং আহ্বায়ক কমিটি ও সকল কমিটিকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
রিইউনিয়ন আয়োজনে আমাকে অনেক কথা শুনতে হচ্ছে।
সবগুলো নাই বা বললাম। আমার মোবাইল কল বা মেসেজ দেখে লোকজন ভাবে এই মনে হয় টাকা চাইবে।
অথবা তথাকথিত মহাজনের মতো পাওনা টাকা পরিশোধ করতে বলবে। বন্ধুরা ফোন ধরে না, মেসেজ
রিপ্লাই দেয় না। পরেও কলব্যাক করে না। নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হয় তখন। তবে ভালোলাগার
বিষয়ও আছে। অনেকের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরে প্রথম কথা হয়েছে। ক্যাম্পাসেও যার সাথে
কথা হয় নাই, তার সাথে কথা বলে আবেগে আপ্লুত হয়েছি। অনেকক্ষণ কথা হয়েছে এবং সাথে সাথে
রেসপন্সও করেছে। খুবই ভালোলাগার অনুভূতি। আর কী চাই? সবচেয়ে ভালোলাগার অনুভূতি হচ্ছে
‘‘তোমাদের প্রোগ্রাম’’-কে সকলের সহযোগিতায় ‘‘আমাদের প্রোগ্রাম’’-এ রূপান্তর করতে পেরেছি।
অটুট বন্ধুত্বে এক পরিবার
বাকৃবি সেশন ২০০১-০২ সবাই মিলে আমরা এক পরিবার। এই বন্ধন অটুট রাখতে যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। মানুষ সামাজিক জীব। কোরআন ও হাদিসেও একত্রে থাকার ব্যাপারে অনেক জায়গায় নির্দেশনা রয়েছে। সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। আচ্ছা, একজন মানুষ খারাপ, আমি যদি তাকে এড়িয়ে চলি, তাহলে কি সে ভালো হওয়ার সুযোগ পাবে? রসুল (সা.) এর শিক্ষাও তো আমাদের জানা। আবার অন্যদিকে অন্যকে দেখে তো আমি উৎসাহিত হতে পারি। সে শত ব্যস্ততার মধ্যে থেকে সবকিছু সামলাতে পারলে, আমি পারছি না কেন? এটা তো সুযোগ পরিশুদ্ধতার। ভালো কাজে প্রতিযোগিতার কথা বলা হয়েছে, হিংসা নয়। আমাদের সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আমরা একটি শক্তিশালী পরিবার গড়ে তুলতে পারবো ইনশাল্লাহ। বন্ধুত্ব রবে অটুট এবং অমলিন। শুভ কামনা অবিরাম।
মোঃ আলাউদ্দিন আহমেদ
ব্যবস্থাপক, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)
আইডি: ০২০২০৩৯, সেশন ২০০১-০২, কৃষি অনুষদ।
0 Comments
No comments yet. Be the first to comment!